শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে আওয়ামী লীগের ১৪ নেতা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই আওয়ামী লীগে নতুন করে শুদ্ধি অভিযান শুরু হবে। এরই অংশ হিসেবে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কমপক্ষে ১৪ জন নীতি-নির্ধারক নেতার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এজন্য দলের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক ডাকার তাগিদ দিয়েছেন।

আলোচিত জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে ১০ জনের বিরুদ্ধে গত ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দল মনোনীত প্রার্থীর বিরোধিতা এবং বিভিন্ন স্থানে দলীয় এমপিদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। গত ১০ সেপ্টেম্বর তাদের শোকজ করা হয়েছে। আর সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে শৈথিল্য প্রদর্শনের অভিযোগ রয়েছে তিনজন এমপি এবং একজন সাবেক মেয়রের বিরুদ্ধে। লিখিত জবাব চেয়ে এই চার নেতার কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সবার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ রয়েছে। ১৪ নেতা ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে চিঠির জবাবও দিয়েছেন। এই নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে কী ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেটা এখন পর্যন্ত স্পষ্ট হয়নি। তবে এদের কারও কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগে নতুন করে শুদ্ধি অভিযান শুরু হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের কয়েকজন নীতি-নির্ধারক নেতা সাংবাদিককে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৬ অক্টোবর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ ও সংসদীয় দলের যৌথসভায় আলোচিত জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের ব্যাপারে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক ডাকার তাগিদ দিয়েছেন। গত শুক্রবারের ওই সভা থেকে আগামী নির্বাচনে বিদ্রোহীদের আজীবনের জন্য দল থেকে বহিস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এরই অংশ হিসেবে জেলা ও উপজেলার ১৪ জন নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে বলে কেন্দ্রীয় নেতারা মনে করছেন। এতে আগামী সংসদ নির্বাচনে বিদ্রোহের আশঙ্কা থাকবে না বলে দলীয়ভাবে মনে করা হচ্ছে।

জেলা ও উপজেলা নেতাদের মধ্যে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে শৈথিল্য প্রদর্শনের অভিযোগ রয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এবং সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান, বরগুনা-১ আসনের এমপি এবং বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, রাজশাহী-৫ আসনের এমপি আব্দুল ওয়াদুদ দারা ও দিনাজপুর-১ আসনের এমপি মনোরঞ্জন শীল গোপালের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে বদর উদ্দিন আহমেদ কামরানের কাছে দীর্ঘদিনেও সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের  পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন না করা এবং দলের স্থানীয় কার্যালয় না থাকার কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতি গড়তে না পারার কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, আব্দুল ওয়াদুদ দারা এবং মনোরঞ্জন শীল গোপালের কাছে। এই তিন এমপি সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের একটি অংশের কাছে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছেন।

শোকজ পাওয়া ১০ নেতা হচ্ছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ অ্যাডভোকেট, সিলেট মহানগর সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দীন আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, বরগুনা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সারোয়ার টুকু, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহসানুল হক মাসুম, দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট হামিদুল ইসলাম ও বীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকারিয়া জাকা।

এদিকে দলের গঠনতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত ৪৭ (ঠ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ১০ নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে বলে একাধিক নেতা জানিয়েছেন। ওই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কেহ দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হইলে দল হইতে সরাসরি বহিস্কার হইবেন এবং যাহারা দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করিবেন, তাহারা তদন্তসাপেক্ষে মূল দল বা সহযোগী সংগঠন হইতে বহিস্কৃত হইবেন।’ এ ছাড়া আলোচিত নেতাদের বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্রের ৪৭ (ছ) অনুচ্ছেদ কার্যকরের সম্ভাবনা রয়েছে। ওই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রতিষ্ঠানের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করিবার ক্ষমতা কেবল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদের থাকিবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর